“আর্টেক্স” বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ব্যতিক্রমধর্মী সংগঠন। “আর্টেক্স “সংগঠনটির পথচলা শুরু হয় ২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি,অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ তম ব্যাচের কতিপয় প্রানবন্ত শিক্ষার্থীদের হাত ধরে, যারা পড়াশোনার পাশাপাশি মনের শৈল্পিক চিন্তাভাবনাগুলোকে শিল্পকর্মে প্রকাশ করতে পারেন। ক্যাম্পাসকে প্রানবন্ত করতে সংগঠনটি শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। বুটেক্সের দেয়ালগুলো শৈল্পিক কারুকাজে সজ্জিত করে দেওয়ার চিন্তায় বিভোর শিক্ষার্থীদের নিয়েই মূলত আর্ট সোসাইটি অব বুটেক্স অথবা “আর্টেক্স” তার যাত্রা শুরু করে।
আর্টেক্স এর সদস্যবৃন্দ চারুকলা কিংবা কোন আর্টিস্ট দ্বারা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নয়, মূলত তরুণ মনের চেতনার প্রকাশ ঘটাতে তাদের এই ক্যাম্পাসের দেয়ালচিত্র অংকনের উদ্যোগ এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশটায় বহুমাএিক শৈল্পিকতা ও দৃষ্টিনন্দনের মাত্রা যোগ করার লক্ষ্যে সবার সম্মিলিত উদ্যোগে আকর্ষনীয় অ্যামবিগ্রাম এবং নান্দনিক শিল্পকর্মের মাধ্যমে সাজিয়েছে বুটেক্সকে। শৈল্পিক সমমনা শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সংগঠনটির গঠনতন্ত্র ও অন্য ক্লাবের তুলনায় আলাদা। প্রেসিডেন্ট – সেক্রেটারি সিস্টেমের বদলে এখানে লিডার, কো-লিডার সিস্টেম প্রচলিত। মোস্ট সিনিয়র ব্যাচ লিডার, তার পরের ব্যাচ কো-লিডার। লিডার সর্বোচ্চ ৫ জন এবং কো-লিডার সর্বোচ্চ ৯ জন।সংগঠনটির বর্তমানে লিডার হিসেবে আছেন ৪১ তম ব্যাচের মুরাদ, জিলানী, কাব্য, সৌরি ও তামিম যাদের হাত ধরেই পথচলা শুরু হয় “আর্টেক্স”এর এবং কো-লিডার হিসেবে আছেন ৪২ তম ব্যাচের তাপস, মারুফ,মূসা, পান্থ এবং সঞ্জয় প্রমুখ।
রং-তুলির শিল্পকর্মের মাধ্যমে ২২ ফেব্রুয়ারি,২০১৯ এ আত্মপ্রকাশিত ” আর্টেক্স”এর সদস্যদের শৈল্পিক সৃজনশীলতাকে পূর্ণতা দিতে ২২ অক্টোবর, ২০১৯ এ সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্নে অভিভাবক হিসেবে শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে বিশেষভাবে সহায়তা করেছেন আরিফ ইকবাল স্যার এবং আব্বাস উদ্দিন শাইখ স্যার।
আর্টেক্স সম্পর্কে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্টের সম্মানিত শিক্ষক আরিফ ইকবাল বলেন , “আর্টেক্সের সাথে কিছুটা হঠাৎ করেই সম্পৃক্ততা শুরু হয় আমার। সংগঠনটি গড়ে উঠে ৪১ ব্যাচের কিছু মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাত ধরে, তারমধ্যে ছিল মুরাদ,জ্বিলানী, কাব্য,সৌরী, তামিম সহ আরও কয়েকজন। ওরা আমার কাছে এসে বলে, স্যার, আমরা ক্যাম্পাসটাকে নতুনরূপে সাজাতে চাই;দেয়ালগুলোতে গ্রাফিডি করতে চাই, শৈল্পিক কিছু বানাতে চাই যেগুলোর প্রত্যেকটিই একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে ;আমরা বিভিন্ন চিএকলা প্রদর্শনী প্রতিযোগিতায় বুটেক্সের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই এবং বিভিন্ন উৎসব পার্বণে বুটেক্স ক্যাম্পাসকে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা দিয়ে রাঙিয়ে তুলতে চাই।এরপরেই ২২ ফেব্রুয়ারি আর্টেক্সের পথচলা শুরু হয়।পহেলা বৈশাখের দিন চমৎকার সব আল্পনা দিয়ে তারা সম্পূর্ণ বুটেক্সকে সাজিয়ে তোলে, যেটা আমরা সবাই দেখেছি। প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্ট সেদিন নিজেদের ডিপার্টমেন্টের নাম আল্পনা করতে,লোগো ডিজাইন করতে, ক্যালিগ্রাফি আঁকতে এবং দেয়ালিকা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর গৌরব অর্জন করতে ব্যস্ত। আমার দেখা সবচাইতে সুন্দর দেয়ালিকা প্রতিযোগিতা ছিল সেটি। আর্টেক্স খুব নান্দনিকভাবে ভাবে বুটেক্সকে রিপ্রেজেন্ট করে আসছে শুরু থেকেই।আমার মনে হয়, যারা টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং এ পড়তে এসে, আর্টেক্সের সাথে জড়িত হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল চিন্তাভাবনার মাধ্যমে শিল্পকর্ম তৈরি করছে, এরা আসলে প্রচুর মেধাবী।সারাজীবন ইন্জিনিয়ারিং পড়ে এসে এরা এধরনের শৈল্পিক কার্যক্রমেও দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে -এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে আঁকা গ্রাফিটিগুলো দেখে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় এবং আর্টেক্স বরাবরই সে জায়গায় বুটেক্সকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। আমি নিজে কখনও রং-তুলিতে অভ্যস্ত ছিলাম না, আঁকতে পারতাম না, কিন্তু যখন শিক্ষার্থীদের গ্রাফিটিগুলো দেখি, থ্রিডি পেইন্টিং গুলো দেখি, সত্যিই অনেক ভালো লাগে। আমি শুধু আর্টেক্সের সাথে যারা ছিল,ওদের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলাম, কি ধরনের কম্পিটিশন করলে তারা বুটেক্সকে তুলে ধরতে পারবে সেই সম্পর্কে ধারনা দিয়েছিলাম, সব কাজ তো আর্টেক্সের ছেলে-মেয়েরাই করছে। আমি আর্টেক্সের সাফল্য কামনা করি এবং প্রানবন্ত সদস্যদের নিয়ে এগিয়ে যাক সংগঠনটি সেই প্রত্যাশা করি।”
আর্টেক্স নিয়ে সংগঠনটির বর্তমান মডারেটর ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইস এন্ড ক্যামিকাল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক ড. আব্বাস উদ্দীন শায়ক বলেন, “আর্টেক্স হচ্ছে বুটেক্সের ছাত্র-ছাত্রীদের সৃষ্টিশীলতার বহিঃপ্রকাশ, ভালোবাসার বন্ধন। এই ছোট্ট ক্যাম্পাসের আউটলুক বদলে দেওয়ার পেছনে আর্টেক্স এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বুটেক্স এর ছাত্র-ছাত্রীদের চিন্তাভাবনা প্রতিফলনই ক্যাম্পাসের দেয়ালে দেয়ালে। পালা, পার্বণ সমাজনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্পকলা, দৈনন্দিন জীবনযাপন, প্রকৌশল, সমাজ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সবই বুটেক্সের দেয়ালে দেয়ালে। শুধু তাই না, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আর্টেক্স এর সৃষ্টিশীলতা দৃশ্যমান। এই বদ্ধ সময়ে চিন্তার দুয়ার খুলে দেয় আর্টেক্স এর সদস্যরা। এভাবেই ভবিষ্যতেও পথ চলবে আর্টেক্স।”
আর্টেক্স নিয়ে সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মো.আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, “যেকোনো কিছুর শুরুটা সবসময়ই খুব কঠিন মনে হয়, এটাই বাস্তবতা। আর ঐ যেকোনো কিছুটা বাস্তব তখনই হয় যখন আপনি সেটাকে ভালোবাসতে পারবেন।
জানি ভালোবাসা হারিয়ে যায়, তবু আমরা ভালোবাসার পিছনে দৌড়াই।বুটেক্স লাইফে এই “আর্টেক্স” একটা ভালোবাসার নাম।শুরুটা বেশ কঠিন ছিল। ব্যক্তিগত ভাবে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু শেষমেশ কুলিয়ে উঠতে পারিনি। আসলে চেষ্টা আর ভালোবাসা থাকলে কোনো না কোনো ভাবে সেটা সম্ভব হবেই। কয়েকজন বন্ধু আর ছোট ভাইকে পেয়েছিলাম পাশে, সবারই সমান কৃতিত্ব। তবে উদ্যোগটা শুরুতে দুজনের ছিল, আমি আর জ্বিলানী। একে একে কাব্য, সৌরী, তামিম মিলে আমরা শুরু করি আর্টেক্স এর যাত্রা। ছোট ভাই বোন গুলো সমান দাবিদার আর্টেক্স এর এই পর্যায়ে আসার জন্যে। দিনটি ছিল ২২শে ফেব্রুয়ারী, সেদিন ছিল বুটেক্সে প্রথম ক্যাম্পাস গ্রাফিটি, মনে হচ্ছিল স্বপ্ন বাস্তব হতে শুরু করেছে। জীবনের একটা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। সেদিন যারা যারা ছিল সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। অনেক অনেক স্মৃতি, অনেক কথা শেষ করতে পারব না বলে। সুতরাং এতোটুকুই জানা থাক সবার। এখন আসি আসল কথায়। আসলে স্বাধীনতা অর্জনের থেকে স্বাধীনতা রক্ষা করা অনেক কঠিন এটা আমরা সবাই জানি। যতটা আবেগ আর ভালোবাসা নিয়ে এই পরিবারটি গড়েছি জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে, তবে বিশ্বাস রাখি আমাদের এই পরিবারকে সবাই আগলে রাখবে। এই পরিবারটি শুরু থেকেই অনেক গরীব একটা পরিবার, কিন্তু সততা আর ভালোবাসা এই পরিবারের প্রধান হাতিয়ার শুরু থেকেই।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমি একজন ছোটখাটো আর্টিস্ট, আর্ট আমার সখ, এই পরিবারে থেকে আমি আমার একটা স্বার্থ অর্জন করতে পেরেছি, তা হলো মনের শান্তি। বিশ্বাস করুন এখানে কোনো অর্থ কিংবা সম্পদ কিংবা অন্য লোভনীয় কিছুই নেই, এখানে আছে মনের শান্তি।আর এই মনের শান্তির জন্যেই দয়া করে এই পরিবার কে টিকে রাখবেন, আরো ভালো কাজ করবেন এই পরিবার থেকে। আপনাদের কাছে আমাদের এটাই চিঠি। ভালো থাকুক ভালোবাসার পরিবার “আর্টেক্স”।”
আর্টেক্স নিয়ে সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জিলানী আহমেদ বলেন,”ভার্সিটি লাইফে একটা ক্লাবের সূচনা করা এবং সেটাকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারা যে কারো জন্যই অনেক বড় একটা পাওয়া বলা যেতে পারে। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। ARTex নিয়ে বললে বলব, এর সব কিছুই আমার কাছে মনে হয় যেন “উদ্দেশ্যহীন মিছিলে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ” এর মত । শুরু টা ছিল মজার। একটা গ্রাফিতি ভিডিও তে মুরাদ কে মেনশন করে বললাম, আমাদের ভার্সিটিতে করা যায় না এমন? ও বলল ২০০০ টাকা ম্যানেজ কর, বাকি কাজ আমি দেখতেছি। ৪০ এর মিথি আপু, ৪১ এর কিছু ক্লোজ ফ্রেন্ড আর ৪২ এর কিছু ছোটভাই মিলে ২০০/৩০০ করে দিয়ে ৩০০০ টাকা তুললাম। সেটা দিয়েই প্রথম প্রোগ্রাম। নতুন কোন কিছু করাই টাফ৷ কিন্তু কোয়ালিটি দেখাতে পারলে সবাই সেটা এপ্রিশিয়েট করে, যেটায় আমরা অনেকটাই সফল বলা যায় হয়তো। এখানে আমার ভালোলাগা কাজ করে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনের সাক্ষী হতে পেরে। অন্য দিন মিটিং এ কেউ থাকুক না থাকুক, কাজের দিনে কাউকে ডাকা লাগে না, সময়মত সবাই হাজির। যেই ভার্সিটির একাডেমিক বিল্ডিং এ কবিগুরুরর অবয়ব আঁকায় (অন্য একজন এঁকেছিল) তুলকালাম হয়ে গিয়েছিল,মুছে ফেলা হয়েছিল, সেই ক্যম্পাসের দিকে তাকালে কি এখন কেউ সেটা বিশ্বাস করতে পারবে? আমি নিশ্চিত, নতুন কাউকে বললে কেউ বিশ্বাস করতে চাবে না। পরিবর্তন এর শুরু হয় এভাবেই।গ্রাফিতির ট্রেন্ড টা ARTex এর হাত ধরেই এসেছে প্রথম। বাইরের ওয়ালে পোস্টারে ভরা থাকত একসময়। সেটাতে গ্রাফিতি করার ৮ মাস পরেও একটা সিংগেল পোস্টার পড়ে নি। হয়ত যারা পোস্টার লাগায় তারাও জায়গাটা নষ্ট করতে চায় নি। আমার মতে এটা অনেক বড় একটা এচিভমেন্ট । আরও ভালো লাগে যখন শুনি আমাদের অনেক সিনিয়র ভাইরাও এই কাজের প্রশংসা করেন। এটাও অনেক বড় পাওয়া। তো, অনেকে জানতে চায় ARTex এর উদ্দেশ্য কি? শুধুই গ্রাফিতি? ছোট করে বললে Art & Photography রিলেটেড সবকিছু এবং সামাজিক কার্যক্রম। গ্রাফিতি একটা অংশ মাত্র।
সবশেষে বলব,ARTex যদি একটি বিল্ডিং হয়,তবে এর প্রতিটি মেম্বার ই একেকটি ইট। আর এটার সিমেন্টিং ইলিমেন্ট হলো ডেডিকেশন। সত্যি কথা বলতে গেলে ওদের এই ডেডিকেশনের জন্য সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ । এখন আমাদের এক্টিভিটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আছে, অদূর ভবিষ্যতে হয়ত রাষ্ট্রীয় – আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যাবে নতুনদের হাত ধরে।”
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, “আর্টেক্স “সংগঠনটি এর প্রথম প্রোগ্রাম এর কাজ শুরু করে এবং দুইদিন ব্যাপী দেয়ালগুলোয় অ্যামবিগ্রাম ও বিভিন্ন শৈল্পিক এবং দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্মের মাধ্যমে রং তুলির আঁচড়ে ছেয়ে যায় বুটেক্সের দেওয়াল। প্রত্যেকটি দেয়ালে ফুটে ওঠে বুটেক্সিয়ানদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ,শোভা পায় অসাধারণ শিল্পকর্ম।
“আর্টেক্স “প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বুটেক্স কে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায়, ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ “মহান স্বাধীনতা দিবস” উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে ARTex পরিবার থেকে “Lets Beautify BUTex” নামক ইভেন্টের মাধ্যমে বুটেক্স ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর করে তােলার একটি নিঃস্বার্থ উদ্যোগ গ্রহন করা হয়, যেটাতে বুটেক্স এর শিক্ষার্থীবৃন্দের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করেন অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলী। স্বাধীনতা দিবসে সবাই মিলে ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পর হাতের ছাপ দিয়ে লাল-সবুজ পতাকা বানিয়ে আর্টেক্স পরিবারের পক্ষ হতে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।
আর্টেক্স অন্যতম একটি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ও দৃষ্টিনন্দন প্রােগ্রাম “রংচং এ বৈশাখ” অনুষ্ঠিত হয় ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৯ এ। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বুটেক্স সেঁজেছিল এক নবরূপে,যার প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছিল ১৩ ই এপ্রিল হতে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ক্যাম্পাসের করিডোরে ডিপার্টমেন্ট গুলোর লোগো এঁকে নিজ নিজ ডিপার্টমেন্ট কে ফুটিয়ে তুলতে চলে রঙের ছোঁয়া, সাথে তুলির আঁচড়। পহেলা বৈশাখ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করতে, ১৩ তারিখ সারাদিনব্যাপী ক্যাম্পাসকে গ্রামীন ঐতিহ্যে সাজানো হয়। তার মধ্যে ছিল “আর্টেক্স পল্লী” নামে তৈরি করা গ্রামীন ঢঙে সাজানো কুঁড়েঘড়, রঙিন হাড়ি, বাহারি রঙের বৈশাখী উপকরণ, কর্কশিটের তৈরি নানান ডিজাইন সহ আরও অনেক কিছু। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় “দেয়ালিকা প্রতিযোগিতা” ও “দেয়ালিকা প্রদর্শনী”।
১৪ ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত দেয়ালিকা প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতায় অনেকেই অংশ নিয়ে বানিয়েছে নানা ধরনের বর্ণিল দেয়ালিকা, যাতে নিজেদের মনের মাধুরী দিয়ে তারা ফুটিয়ে তুলে পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্য। দেয়ালিকা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট-৪৫ ব্যাচ এবং রানার্স আপ হয়েছিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইন্জিনিয়ারিং -৪৫ ব্যাচ।বস্তুুত সব ডিপার্টমেন্টেই অসাধারণ সৃজনশীলতা ও দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্মের মাধ্যমে দেয়ালিকা তৈরি করেছিল। বিজয়ীদল ও রানার্স আপ দলকে আর্টেক্সের পক্ষ হতে পুরস্কৃত করা হয়। পাশাপাশি, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক আরিফ ইকবাল ও বুটেক্স ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল আলম সাকিব ও সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল ইসলাম লিংকন।
আর্টেক্স এর সার্বিক অতীত সফলতা এবং বুটেক্সের শিক্ষার্থীদের শিল্প-মনের বিকাশে সহযোগী হওয়ায়, সংগঠনটি ২২ অক্টোবর, ২০১৯ সালে সার্বজনিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং বুটেক্সের অন্যতম অঙ্গ-সংগঠন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
এরপর, ২৪ অক্টোবর, “আয়নায় বুটেক্স “এর ফেইসবুক লাইভ আড্ডায় মেতে উঠে ” আর্টেক্স” সংগঠনটির সদস্যরা এবং আর্টেক্সকে সেদিন নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তার কিছুদিন পরেই ১১ই নভেম্বর , আবার নতুন করে বুটেক্স সাজে শৈল্পিকতার ছোঁয়ায়। ১১ নভেম্বর,২০১৯ এ আর্টেক্স কর্তৃক আয়োজিত “নীরবতায় কলরব” প্রোগ্রামে গ্রাফিটিতে অংশগ্রহণ করে অএ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং বুটেক্সের বাইরের দেয়ালগুলোতে দৃষ্টি-নন্দন গ্রাফিটি করে নবরূপে সাজিয়ে তোলে দেয়ালগুলোকে এবং সেজন্য দেয়ালের গ্রাফিটিগুলো সবসময় বুটেক্সের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ করে থাকে। ARTex এর “নিরবতায় কলরব” এর ২য় দিনে হয় হালকা কলরব এবং কলরবে বুটেক্স মাতাতে আসে ৪ টি ব্যান্ডঃ Insipid, 5th chapter,Suicidal pumpkin, Golpo।
এরপর গত ২৫ জানুয়ারি, ২০২০, আর্টেক্স সংগঠনটি প্রথমবারের মতো এর কমিটি ঘোষণা করে এবং ২২ ফেব্রুয়ারি,২০২০, সংগঠনটির পথচলার একবছর পূর্ন হয়।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারনে যখন সবাই বাসায় বন্দী থাকতে বাধ্য, ঠিক তখনই “আর্টেক্স” নতুনভাবে বুটেক্সের শিক্ষার্থীদের মন রং-তুলি দিয়ে রাঙিয়ে তুলতে ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ এ আয়োজিত করে “যেমন খুশি তেমন আঁকো” এবং এরপরেই বুটেক্সের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই একে ফেলেন চমৎকার সব পেইন্টিং, থ্রিডি-ড্রয়িং সহ নানাবিধ সৃজনশীল চিএকর্ম।
“আর্টেক্স “এভাবেই বিভিন্ন আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সকলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে রং-তুলির শিল্পকর্মে বুটেক্সকে নান্দনিকভাবে ভাবে সাজানোর প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে এবং বুটেক্সের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ও রংতুলির মাধ্যমে সেটাকে বাস্তব শিল্পকর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্ভুদ্ধকারী প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে যেতে দৃঢ়ভাবে সংকল্পবদ্ধ।
Writer: Abir Mohammad Sadi BUTEX Sr.Campus Ambassador, BUNON