পলিয়েস্টার হচ্ছে একটি সিনথেটিক ফাইবার। এর নির্দিষ্ট কিছু উপাদান রয়েছে, যার মধ্যে ৮৫% এস্টারের মিশ্রনযুক্ত পলিমারের দীর্ঘ চেইন এবং ডাইহাইড্রিক অ্যালকোহল এবং থেরেফথালিক অ্যাসিড বিদ্যমান। বর্তমানে বহুল ব্যাবহৃত ফাইবারের মধ্যে পলিয়েস্টার অন্যতম।
পলিয়েস্টারের ইতিহাস
১৯২৬ সালে আমেরিকা ভিত্তিক কোম্পানি ই.আই.ডু পন্ট ডে নেমর এ্যান্ড কোম্পানি সিনথেটিক ফাইবার নিয়ে গবেষণা শুরু করে। ১৯৩৯-৪১ সালের দিকে বৃটিশ রসায়নবিদরা সেই গবেষণার উপর আগ্রহ প্রকাশ করে এবং ক্যালিকো প্রিন্টার্স অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেডের গবেষণাগারগুলিতে তাদের নিজস্ব ল্যাবে গবেষণা পরিচালিত করে। ফলে উদ্ভব হয় “টেরেলিন” নামের এক প্রকার ফাইবার। সেই দিনের “টেরেলিন” ই উন্নত হয়ে বর্তমানের জনপ্রিয় পলিয়েস্টার এ রুপ নেয়।

পলিয়েস্টার কিভাবে উৎপাদন হয়?
পলিয়েস্টার পলিমারের দীর্ঘ চেইন দ্বারা গঠিত। প্রাথমিকভাবে দুই প্রকার পলিয়েস্টার উৎপাদন করা হয়ঃ
১. PET
২. PCDT
তবে স্থায়িত্ব, জনপ্রিয়তা ও ব্যাবহারের দিক থেকে PET বেশি জনপ্রিয়। তবে স্থিতিস্থাপকতার দিক থেকে PCDT চাহিদা ও হেলাফেলা করার মত না।
আসুন জেনে নেই কিভাবে পলিয়েস্টার তৈরি হয়:
প্রথমে পলিমার চিপস সংগ্রহ করা হয় পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক পদার্থ থেকে। সংশ্লেষণ বিক্রিয়ায় বায়ু,জল, কয়লা, পেট্রোলিয়াম ব্যবহার করা হয়। এই রেজিনগুলো পরিশোধিত টেরেফথালিক অ্যাসিড( PTS) অথবা ডাইমেথাইল টেরেফথ্যালেট দিয়ে তৈরি।
পদার্থগুলি তৈরিতে ব্যবহ্ত সাধারণ ধরণের রাসায়নিক বিক্রিয়া শূন্যতায় খুব উচ্চ তাপমাত্রায় গঠে। সাধারণত, একটি পেট্রোলিয়াম বাইপ্রোডাক্ট এবং একটি কার্বক্সাইল মিশ্রিত করে যৌগিক মনোমার বা এস্টার তৈরি করতে হয়। এই প্রক্রিয়াকে পলিমারাইজেশন বলে। পলিমারাইজেশন প্রক্রিয়াটিতে তৈরিকৃত পলিমার উপাদান গুলি দীর্ঘ ফাইবারে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে এই ফাইবারকে বিভিন্ন প্রকিয়ার মাধ্যমে ইয়ার্ন এ রূপান্তরিত করা হয়।

পলিয়েস্টারের বৈশিষ্ট্যঃ
১. দৃঢ় ও শক্ত হয়।
২. খুব দ্রুত শুকায়।
৩. ক্যামিকেল ও ছত্রাক প্রতিরোধী।
৪. সহজে সংকোচিত হয়না।
৫. ঘর্ষণ প্রতিরোধী ও সহজে ধৌত করা যায়।
৬. উজ্জ্বল এবং সূর্যের আলোতে কাপড়ের রং নষ্ট হয়না।
পলিয়েস্টারের ব্যবহার:
১. খেলাধুলার জার্সি, ট্রাউজার, জ্যাকেট ইত্যাদি তৈরিতে প্রচুর ব্যাবহার করা হয়।
২. দড়ি, ফুড প্যাকেজিং
৩. কারপেট, কুশন তৈরিতে
৪. শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, আচ্ছাদন ও সৌন্দর্যবর্ধনে
৫. অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে
৬. ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির আইসোলেশন তৈরিতে
৭. প্রিন্টিং শিল্পে

পলিয়েস্টার উৎপাদনকারী কয়েকটি বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল; আলপেক, বুম্বে ডায়িং, চায়না পেট্রোকেমিক্যাল, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, উইলিয়াম বারনেট এন্ড সন্স প্রভৃতি।
তবে এই জায়গায় বাংলাদেশ ও পিছিয়ে নেই, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পলিয়েস্টার উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানির সাথে জড়িত। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল; বি.বো. ট্রান্স, এম.এন.সি অ্যাপারেল লিমিটেড, আরমোর গার্মেন্টস লিমিটেড, বিনটেক টেক্সটাইল লিমিটেড প্রভৃতি। তবে বাংলাদেশে এই জায়গায় উন্নতি করার প্রচুর জায়গা আছে। রির্সাচ ও উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে সম্ভাবনাময় এই খাতকে এগিয়ে নিতে হবে।
অনেক তো গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে কথা হল এবার আসা যাক পলিয়েস্টার চাহিদা ও সম্ভাবনা, বিশ্ববাজারে চাহিদা কেমন সেই প্রসঙ্গে, পুরো বিশ্বের মানবসৃষ্ট ফাইবারের ৫০% বাজার দখল করে আছে পলিয়েস্টার। ২০০০ সাল থেকে পলিয়েস্টারের চাহিদা প্রতি বছর ৫% করে বাড়তে থাকে এবং ২০১৬ সালে এসে সামগ্রিক ব্যাবহারের ৬৮% বাজার পলিয়েস্টার দখল করে বসে৷ যার সিংহ ভাগ ই ব্যাবহার হয় এশিয়ার চায়না, বাংলাদেশ, ভারতের পলিয়েস্টারের পণ্য তৈরিতে এবং সেই পণ্য ব্যাবহার হয় পুরো বিশ্বে।
আশা করা হচ্ছে ২০২৪ সালে পলিয়েস্টারের বাজার বেড়ে দাঁড়াবে ৪২,৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অটোমোবাইল, নির্মাণশিল্পে ও আজকাল পলিয়েস্টার ব্যাবহার লক্ষ করা যায় সেই সাথে অ্যাপারেল সেক্টর তো আছেই। সুতরাং বলা যায়, অদূর ভবিষ্যতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে পলিয়েস্টার ব্যাবহার এবং সেই সেই সাথে উন্নতি আসবে পলিয়েস্টার বৈশিষ্ট্যেও।
Writer: Mohammad Tayub PCIU Campus Ambassador, Bunon