মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হওয়ায় উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ুর এবং মাটির কারনে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পাট এ অঞ্চলেই জন্মে। সেই সুবাদেই ১৯৫১ খ্রীস্টাব্দে বাংলাদেশের নারায়নগঞ্জ শহরের শীতলক্ষ্যার তীরে ২৯৭ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় পৃথিবীর বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিল। এর আগে সমস্ত পাট রপ্তানী হতো বিদেশের বাজারে। আদমজীকে এক সময় বলা হতো প্রাচ্যের ডান্ডি (স্কটল্যান্ডের ডান্ডির নামানুসারে)।
পরবর্তীতে মূলত ষাট ও সত্তর এর দশকে দেশে অসংখ্য পাটকল স্থাপিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানের বাংলাদেশ) এর উন্নতমানের পাট ব্যবহার করে আদমজী পাটকলে উৎপাদিত হতো চট, কার্পেটসহ বিভিন্ন প্রকার পাটজাত দ্রব্য। যা দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হতো চীন, ভারত, কানাডা, আমেরিকা, থাইল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এ সময় আদমজী জুট মিল হয় পৃথিবীর অন্যতম জুট মিল এবং এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ কারখানা ছিল। ঐ সময় এ মিলের উৎপাদন হইতে বছরে ৬০ কোটি টাকা আয় হত। ১৯৭০ এর দশকে প্লাস্টিক ও পলিথিন পাটতন্তুর বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে আদমজী পাটকলের স্বর্ণযুগের অবসান হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এটিকে জাতীয়করণ করা হয়। তখন থেকে ১৯৮০ এর দশকের কয়েকটি বছর ব্যতীত অন্য সব বছর এটি বিপুল পরিমাণে লোকসান দেয়।ফলে ২০০২ সালে এই পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এর ধারাবাহিকতায় একের পর এক মিল বন্ধ হতে থাকে।এতে যেমন অসহায় হয়ে পরে পাট শিল্প সেই সাথে অসহায় হয়ে পরে পাট শিল্পে কর্মরত শ্রমিক এবং পাট চাষি।
এরপরও আশার কথ হলো, বর্তমানে পাট শিল্প উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১০ সালে সরকার পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। বর্তমানে মোট ১৭টি পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পাট পণ্যের চাহিদা প্রায় ৭.৫০ লাখ মেট্রিক টন এবং এর মধ্যে যা বাংলাদেশ রপ্তানি করে ৪.৬০ লাখ মেট্রিক টন। যা প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও বেশি। পাট থেকে উন্নতমানের ভিসকস সুতা উৎপাদন হয়। যার সুতি কাপড় থেকে ও বাজার মূল্য বেশি। বর্তমানে পাট থেকে তৈরী হচ্ছে চা। পাটখড়ি জ্বালানির প্রধান উৎস হলে গত কয়েক বছর ধরে পাটখড়ির চারকোল বিদেশে রফতানি হচ্ছে আয় হচ্ছে হাজার কোটি টাকা।
পাটকে এদেশে সোনালী আঁশের সাথে তুলনা করা হয়। পাট বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকি। এ মুদ্রা সহায়তা করে আমাদের অর্থিনীতি প্রবৃদ্ধিতে। পাট চাষের উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করছে দেশের অনেক কৃষক। দেশের ০৮ থেকে ১০ মিলিয়ন কৃষক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাট উৎপাদনের সাথে জড়িত। দেশে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয় যা থেকে প্রায় ৮০ লাখ বেল পাট আঁশ উৎপন্ন হয়। বছরে উৎপাদিত এ পাটের শতকরা ৫১ ভাগ পাট ভারী পাটকলে ব্যবহার করা হয়, প্রায় ৪৪ ভাগ কাঁচাপাট বিদেশে রপ্তানি হয় ও মাত্র ৫ ভাগ দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে কাজে লাগে। গত ৭০ ও ৮০ দশকের তুলনায় পাটের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং আশাতীত ভাবে তা বাড়ছে।
Writer: Sakib Ahmed Rajib BUTEX Campus Ambassador, Bunon