প্রাগৈতিহাসিক থেকে অষ্টম সেঞ্চুরীতে শিল্প বিপ্লব পর্যন্ত পূর্ব বাংলা বস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। পাক-ভারত উপ-মহাদেশে বংশানুক্রমিকভাবে সুদক্ষ কারিগর (Artisan) গ্রুপ আকারে কুটির শিল্প হিসেবে বস্ত্র উৎপাদন করত।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ায় পাকিস্তানের অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যুদয় হয়। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে পূর্ব পাকিস্তানে বেকারত্ব ও শ্রমিক সস্তা হওয়ায় বেসরকারী অধীকাংশ বস্ত্রশিল্প পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপিত হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানি শাসনের অবসান হয়। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ The Bangladesh Industrial Enterprises (Nationalization) Order No 27 of 1972 (President Order No 27 of 1972) এর ক্ষমতাবলে Bangladesh Textile Mills Corporation (BTMC) বা বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস্ করপোরেশন(বিটিএমসি) গঠন করা হয়।
President Order No 27 of 1972 এর মাধ্যমে জাতীয়করণকৃত ৭৪টি মিল নিয়ে ১৯৭২ সালের ১লা জুলাই হতে বিটিএমসির আনুষ্ঠানিক কার্য্ক্রম শুরু হয়। জাতীয়করনের ৩টি বাস্তব সম্পদবিহীন (নামসর্বস্ব) বিটিএমসি‘র তালিকায় রয়েছে। সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় পরবর্তীতে বিটিএমসি’র মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ১২টি শ্রমনিবিড় বস্ত্র শিল্প স্থাপন করা হয়। ফলে বিটিএমসি’র মিল সংখ্যা দাড়ায় ৮৬টি। দেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ১০৫টি বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বিটিএমসি’র মিলগুলোতে উৎপাদিত সুতা এবং কাপড় সাধারণ ভোক্তাদের নিকট ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করা হতো।
স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের সূতা ও বস্ত্রের চাহিদা পূরনে বিটিএমসি’র মিলগুলো সিংহভাগ ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্ব অর্থনীতি পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারী শিল্প মালিক এবং দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে বিরাষ্ট্রীয়করণ শিল্প নীতির আওতায় জাতীয়করণকৃত বস্ত্র মিলগুলোর মধ্যে ৩০টি মিল সাবেক বাংলাদেশী মালিকদের নিকট ফেরৎ দেয়া /হস্তান্তর করা হয় এবং ১২টি মিল বেসরকারীকরণ করা হয়। লিকুইডেশন সেল কর্তৃক ৩টি মিল বিক্রি ও বিক্রির জন্য লিকুইডেশন সেলে ৪টি মিল ন্যাস্ত করা হয়। শিল্পখাতে শ্রমিকদের অংশীদারিত্ব প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করে ৯টি মিল শ্রমিক-কর্মচারীদের মালিকানায় ছেড়ে দেয়া হয়। এভাবে ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ে বিটিএমসি’র মোট ৫৮টি মিল বিক্রি, হস্তান্তর ও অবসায়ন করা হয়। বিটিএমসি’র নিয়ন্ত্রনে বর্তমানে ২৫টি মিল রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি মিল ভাড়ায় চালু আছে। চিত্তরঞ্জন কটন মিলস, নারায়নগঞ্জ-এ “টেক্সটাইল পল্লী” স্থাপনের কার্যক্রম চলমান আছে।
১৯৯৭ সালে বিটিএমসি’র মিলগুলোতে সার্ভিসচার্জ পদ্ধতি চালু করা হয়। মিলগুলোর যন্ত্রপাতি ৩০/৪০ বছরের পুরানো প্রযুক্তির বিধায় সার্ভিসচার্জ পদ্ধতিতে পরিচালনা করে মিলের আয় দ্বারা উৎপাদন ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হয়নি।বেকারত্ব দূরীকরন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিটিএমসি ভর্তুকী প্রদান করেও সার্ভিসচার্জ পদ্ধতিতে মিল চালনার জারী রাখে। কিন্তু ২০১৭ সালে ভর্তুকির পরিমান মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মিলগুলো আধুনিকায়নে সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকায় লোকসান হ্রাসের লক্ষ্যে সার্ভিস চার্জ পদ্ধতির পরিবর্তে ভাড়া পদ্ধতিতে মিল চালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।ঢাকা চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহরের প্রাইম-জোনে স্থাপিত বিটিএমসি ‘র মিলগুলোতে প্রায় ৬২৩.৯৫ একর জমি রয়েছে। মিলগুলো যে সকল স্থানে অবস্থিত সেখান হতে স্থল, নৌ এবং বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সকল ইউটিলিটি সার্ভিসের সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।
সহশ্রাব্দ উন্নয়ন অভিষ্ট লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের আলোকে ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরের নিমিত্তে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সাথে পিপিপি ও যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হচ্ছে। এলক্ষ্যে বিটিএমসির মিলগুলো পর্যায়ক্রমে পিপিপি ও যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের মাধ্যমে আধুনিকায়ন ও নতুন গ্রীন প্রকল্প গ্রহনপূর্বক শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরিকল্পনার আওতায় আনা হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে পিপিপি কর্তৃপক্ষের সাথে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে। বস্ত্র শিল্পের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পরিকল্পনা অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ব মিলগুলোতে সরকারী-বেসরকারী যৌথ ও সমন্বিত উদ্যোগে আধুনিক প্রযুক্তির বস্ত্রশিল্প স্থাপনে বিটিএমসি নিরলসভাবে কাজ করে যেতে সংকল্পবদ্ধ।
Writer : Abir Mohammad Sadi BUTEX Sr.Campus Ambassador, BUNON