আমরা কমবেশি সবাই “ফাস্ট ফ্যাশন” শব্দটির সাথে পরিচিত। সারা বিশ্বে গার্মেন্টস ফ্যাশন খুবই দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের দেশেও এটি থেমে নেই। ছোট একটি উদাহরনের মাধ্যমে এটি বুঝা যেতে পারে, এক সময় আমরা দেশের বাইরে দেখতাম হ্যালোইন পার্টি, আজ আমরা দেশের মধ্যেই দেখছি হ্যালোইন পার্টি। প্রত্যেক উৎসব অনুযায়ী আমাদের ড্রেস কোড পরিবর্তন হচ্ছে। এতে খুব সহজেই বুঝা যাচ্ছে টেক্সটাইল সেক্টরের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি আর গদ-বাধা কয়েকটি ডিজাইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং এরই সাথে তাল মেলানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে আমাদের তৈরি পোশাক ইন্ডাস্ট্রি।
আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় লোকাল ব্রান্ডগুলো যেমন ( আড়ং, ক্যাটস আই, রিচ ম্যান, ইয়েলো, দর্জিবাড়ি ইত্যাদি) নিজস্ব ডিজাইন স্টুডিও আছে। বর্তমান ফ্যাশনের সাথে তাল মিলিয়ে তারা প্রতিনিয়ত চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন ডিজাইন নিয়ে আসছে। বর্তমানে জন্মদিনের উৎসব থেকে শুরু করে জাতীয় সকল উৎসবেই ( পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, নবান্ন উৎসব এছাড়া ধর্মীয় উৎসব তো আছেই ) ব্যাবহার হচ্ছে ভিন্ন ফ্যাশনের ড্জগ। তাই ফ্যাশন ডিজাইনের ক্রমবিকাশ দেশীয় সংস্কৃতির আলোকে খুব বেশি নতুন কিছু নয়।
প্যারিস, মিলান, লন্ডন এবং নিউ ইয়র্কের মতো বিশ্বের শহরগুলিতে প্রতিনিয়ত ফ্যাশন চেঞ্জ হচ্ছে। বাংলাদেশি পোশাক প্রস্তুতকারকরা এখন বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং ব্যবসাকে টেকসই করতে নিজের ডিজাইনের বিকাশের গুরুত্ব উপলব্ধি করছে। ইন্ডাস্ট্রি ইনসাইডারের এর তথ্য অনুসারে, পোশাক প্রস্তুতকারকের করা ডিজাইনটি যদি বায়ার বা ব্রান্ডের পছন্দ হয়ে যায় তবে সরবরাহকারি পণ্যটির দাম ২০% বেড়ে যায়। আরও বলেন, দেশে এখন ১০০ টি পোশাক রফতানিকারীর নিজস্ব ডিজাইন স্টুডিও এবং উদ্ভাবন কেন্দ্র রয়েছে, যার ২৫ টিই বিশ্বমানের।
দেশের অন্যতম পোশাক রফতানিকারক স্প্যারো গ্রুপ ২০১৪ সালে নিজস্ব ডিজাইন স্টুডিও স্থাপন করেছিল। দিন দিন এর পরিধি এতই বেড়েছে যে জাতীয় সীমানা পার হয়ে ইউরোপের ডিজাইনারদেরও নিয়োগ করছে। তিন বিদেশী সহ ৪০০ এরও বেশি লোক স্প্যারো গ্রুপের ডিজাইন স্টুডিওতে কাজ করে। তাদের কাজ হচ্ছে ক্রেতাদের ফ্যাশন চাহিদা গবেষণা করা এবং পরবর্তী ২-১ বছর কোন ফ্যাশন স্থায়ী হবে সে অনুযায়ী ডিজাইন তৈরি করা।
ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড বেশ কয়েক বছর ধরে নিজস্ব ডিজাইন স্টুডিও চালাচ্ছে। ইউরোপিয়ান বাজারে “BlueXonly” নামক নিজস্ব ব্রান্ডের ডেনিম মার্কেটিং করে থাকে। এই ফার্মের মালিক মোস্তাফিজ উদ্দিনের মতে, যে সংস্থাগুলি পণ্য রফতানি করে সেখানে কোনও সংস্থার অবশ্যই ডিজাইন স্টুডিও থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, রফতানিকারকরা কখনও কখনও নিজস্ব ডিজাইনকৃত পণ্যগুলিতে ৫০% পর্যন্ত অতিরিক্ত দাম নিয়ে থাকেন।
২০১৮ সালে পরিচালিত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ২১% রপ্তানিমুখী কারখানার নিজস্ব ডিজাইন স্টুডিও ও উন্নয়ন কেন্দ্র আছে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, দেশে ৩ হাজার ৩০০ পোশাক কারখানার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পোশাক শিল্পে ডিজাইন স্টুডিও ও উন্নয়ন কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭০০ এরও বেশি।
প্রায় এক দশক আগে খুব কম সংখ্যক পোশাক রফতানিকারক গ্রুপই তাদের নিজস্ব ডিজাইন স্টুডিও-এর কথা ভেবেছিলেন। তার মধ্যে একটি ছিল প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড। ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে, যেসকল গ্রুপের ডিজাইন স্টুডিও ও উন্নয়ন কেন্দ্র আছে সেগুলো হল, এপলিওন গ্রুপ, ভিয়েলাটেক্স, স্নোটেক্স গ্রুপ, অনন্ত গ্রুপ, স্প্যারো গ্রুপ, এস এম নিটওয়্যার, শারমিন গ্রুপ, টিম গ্রুপ, ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড, প্যাসিফিক জিনস, কে ডি এস গ্রুপ, স্কয়ার ফ্যাশন, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও, এস কিউ গ্রুপ, টি এ ডি গ্রুপ, ফকির ফ্যাশন, সোনিয়া গার্মেন্টস, ঊর্মি গ্রুপ ও মেঘনা নীট।
পোশাক রফতানির ধারা ধরে রাখতে ডিজাইন স্টুডিও ও এর উন্নয়নের ব্যতিক্রম নেই। ইন্ডাস্ট্রি মালিকরা এখন ডিজাইন স্টুডিয়োতে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করছে। ডিজাইনিং এ বেশিরভাগ ঊর্ধ্বতন কর্মীরাই বাইরের দেশের। তাই ডিজাইনিং সেক্টরেও দেশীয় ডিজাইনার এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনারদের বড় সুযোগ রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রায় অনেক ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইলে ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টে ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্সটিও অন্তর্ভুক্ত করেছে।
রিপোর্টার: মাসুম আহমেদ
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সটাইলস (বুটেক্স)
ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর, বুনন
Ref: www.tbsnews.net