বোতাম সাধারণত গোল বা অন্যান্য চাকতি আকৃতিরও হতে পারে এমন বস্তু যা বস্ত্র ও ফ্যাশন ডিজাইনে ব্যবহৃত হয়। সচারচর কাপড়ের কোনো অংশ ঢেকে রাখতে বোতাম ব্যবহৃত হয়, আবার সৌন্দর্য বর্ধনের অলঙ্কার হিসেবেও এর ব্যবহার অধিক মাত্রায় লক্ষ্য করা যায়।ব্যাবহৃত শার্ট বা অনান্য পোশাকে লম্বা আকৃতির খোলা অংশে একটি নির্দিষ্ট স্থান পরপর বোতাম লাগানো হয়। যে স্থানে বোতাম প্রবেশ করানো হয় সেখানে একটি ছিদ্র থাকে যা বোতাম ছিদ্র নামে পরিচিত।
বোতামের উপাদানঃ
বিভিন্ন প্রকার বস্তুর দ্বারা বোতাম তৈরি করা হয়। এর মধ্যে কিছু আছে প্রাকৃতিক, আবার কিছু আছে কৃত্রিম। প্রাকৃতি পদার্থগুলোর মধ্যে আছে পশুর হাড়, শিং,বাঁশের শক্ত খোল, আইভরি, শামুক বা ঝিনুকের খোলস, কাঠ, নারকেলের খোলস, ইত্যাদি। এদিকে কৃত্রিম পদার্থগুলোর মধ্যে আছে সেলুলয়েড, কাচ, ধাতু, ব্যাকেলাইট, প্লাস্টিক ইত্যাদি। শক্ত প্লাস্টিক হচ্ছে বোতাম তৈরির সবচেয়ে সাধারণ ও প্রধান কাঁচামাল। অন্যান্য পদার্থগুলো মূলত বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় বা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য।ব্যবহার হয়৷
বোতামের ব্যাবহার :
বোতামের কাজ শুধু শার্ট বা জামা আটকানোতে সীমাবদ্ধ নয়। পোশাকের নকশায়, ডিজাইনে বোতামের ব্যবহার যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। পোশাককে জমকালো করতেও বোতাম ব্যবহার করা হচ্ছে।বর্তমান ফ্যাশন ডিজাইনের নতুনমাত্রার বিপ্লব এনে দিচ্ছে বোতামের সংযুক্ততা। সহজলভ্যভাবে পাওয়া যায় বলে বোতামের ব্যবহার সর্বত্র।ফ্যশনেবল বোরখা, প্যান্ট এমনকি চেইনের পরিবর্তে বোতামের সর্বাধিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়
বোতাম সমাচারঃ
কামিজ, সালোয়ার, শার্ট, প্যান্ট, কুর্তি, টপস কিংবা ফতুয়া মেয়েদের সব রকমের পোশাকেই বোতাম ব্যবহার করা হচ্ছে। গলার নকশা, জামার হাতায় ফোল্ড রিবন, সোল্ডার ফোল্ড, শেরোয়ানি কাটের কামিজে এমনকি শাড়িতেও ছোট ছোট বোতামের ব্যবহার থাকছে। প্রতিটি পোশাকের ডিজাইনে বোতামের ব্যবহার করা হচ্ছে । ক্রেতাদের মধ্যে এ ধরনের পোশাকের চাহিদাও বেশ ভালো।’ ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় এখন বোতাম দিয়ে নকশা করা পোশাকের স্থান ওপরে।জামার ডিজাইনে লেস, জরি, চুমকির ব্যবহার অনেক সময় বেশ জবড়জং লাগে সেদিক থেকে বোতাম দিয়ে ডিজাইন করা জামাগুলো সবার সবচেয়ে পছন্দের। জামার সাদামাটা লুক অনায়াসেই বদলে যায়, আবার কড়াভাবে চোখেও লাগে না।
কোথায় কেমন বোতামঃ
বোতামের ব্যবহারে মূলত পোশাকের আভিজাত্য বাড়ে। খুব সাধারণ একরঙা একটা পোশাক কে বিপরীত রঙের কয়েকটি বোতাম নিমেষেই অসাধারণ বানিয়ে ফেলে। কাঠ, কড়ি, পুঁতি, মুক্তা, পাথর কিংবা কাপড়ের বোতাম ব্যবহার করা হয় পোশাকের ডিজাইনে। সুতির কামিজ, ফতুয়া, টপসে ফলস কাপড়ের বোতামই বেশি ব্যবহৃত হয়। অনেক ক্ষেত্রে কাপড় দিয়ে বোতাম ঢেকে তার ওপর হয় সুতার কাজ। পোশাকের বিপরীত রঙের বোতাম ব্যবহার করে কনট্রাস্টও আনা হচ্ছে।জমকালো পোশাকে স্টোন, পার্লের নকশাকরা বোতাম ব্যবহার করা হয়। জমকালো বোতামের ক্ষেত্রে মূলত পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়েই পাথর, পুঁতির বোতাম নির্বাচন করা হয়। সোনালি, রুপালি পাথরের বোতাম প্রায় সব রঙের সঙ্গেই যায়। আকার-আকৃতির দিকেও মার্জিত হয়ে ফুটে ওঠে। বড় আকারের বোতামগুলো মূলত মেয়েদের পোশাকে গলার ডিজাইনে ব্যবহার করা হয় একটি করে। এর সঙ্গে পোশাকের অন্য কোথাও বোতাম ব্যবহার করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে ছোট আকৃতির বোতাম লক্ষ্যনীয় । শো বোতাম বা আকারে ছোট বোতাম মূলত লম্বা সারি করেই ব্যবহার করা হয় যেমন শার্টে।
শিল্পের বিপ্লবে বোতামঃ
ধরতে গেলে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পোশাকে ব্যবহৃত হচ্ছে বোতাম। দেশের সৈয়দপুরে একটি কারখানায় গরু-মহিষের শিং ও হাড় থেকে উন্নতমানের রকমারি বোতাম তৈরি হচ্ছে। বাহারি ডিজাইন ও নকশার বোতাম রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অ্যাগ্রো রিসোর্স কোম্পানি লিমিটেড নামের কারখানায় গরু-মহিষের শিং ও হাড় প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে তৈরি এসব বোতাম দেখতে আকর্ষণীয় এবং টেকেও অনেক দিন। দিন দিন প্রতিষ্ঠানটির তৈরি বোতামের চাহিদা বেড়ে যায় কারন পোশাকে চাহিদা বাড়ছে । বর্তমানে বোতাম কারখানা গুলোতে সহস্রাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের কারখানায় তৈরি বিপুল পরিমাণ টাকার বোতাম চীন, অস্ট্রিয়া, হংকং, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। এতে একদিকে যেমন দেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে, তেমনি এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছ।
সতর্কতাঃ
বোতামযুক্ত কোনো কাপড়ই ওয়াশিং মেশিনে ধুতে দেওয়া যাবে না। এতে বোতাম ভেঙে যাবে। কাপড় হাতে ধোয়ার ক্ষেত্রেও বাড়তি সতর্কতা রাখতে হবে। তা না হলে অনেক সময় পাথর পড়ে যায় বা বোতাম ভেঙে যায়।
Writer: Azad Chowdhury DWMTEC Research Assistant, Bunon